করোনাতে কাজ হারিয়ে অবসরে সোয়েটার বুনতেন, মাথায় আসে এক আইডিয়া,কোটি টাকার ব্যাবসা !

শীতের মৌসুমে আমরা সাধারণত মহিলাদের হাতে সোয়েটার বুনতে দেখি, কিন্তু আপনি কি আপনার বাবা বা ভাইকে সোয়েটার বুননের কাজ করতে দেখেছেন? বেশিরভাগ মানুষের উত্তর হবে না কারণ আমাদের সমাজ শুরু থেকেই নারী -পুরুষের কাজকে ভাগ করে নিয়েছে। যাইহোক, এখন সময় পরিবর্তন হচ্ছে এবং মানুষের চিন্তাভাবনাও পরিবর্তন হচ্ছে এবং এই চিন্তাভাবনা এখন নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য কমিয়ে দিচ্ছে।এমনই কিছু পরিবর্তনের কারণে কর্ণাটকের এক যুবক সোশ্যাল মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছেন। হ্যাঁ, মহিলাদের সোয়েটার বুননের শখের কারণে, কর্ণাটকের সজল (ইঞ্জিনিয়ার সজল) আজ সোয়েটার বুনে বেশ ভাল অর্থ উপার্জন করছেন।

সজল কর্ণাটকের হুবলির বাসিন্দা এবং পেশায় একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রকৌশলী। অনেক কষ্ট এবং পরিশ্রম করে একটা কাজ জোগাড় করেছিলেন, তার জীবন ভালোই চলছিল কিন্তু সবার মতো করোনা মহামারী তার জীবনেও প্রভাব ফেলেছিল। কোভিড লকডাউনের কারণে,চলে যায় চাকরি। তিনি তার চাকরি ছেড়ে বাড়িতে ফিরে আসেন, যার পরে, অন্যদের মতো, তিনিও দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন।চাকরি চলে যাবার পরে বাড়িতে বিরক্ত হয়ে তিনি বসে ছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটি জাতীয় সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এমন সময়ে সজলের চোখ পড়ল একটা আর্টিকেলে, যেটা পড়ে সে জানল সোয়েটার বুনন তাকে অ্যাংজাইটি ডিপ্রেশন এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। সোয়েটার বুনন ডিপ্রেশন অথবা অ্যাংজাইটি এর বিরুদ্ধে একটি থেরাপি হিসাবে কাজ করে। এই তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে সজলও এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে সোয়েটার বোনার সিদ্ধান্ত নেন।

```

এর পরে তিনি বুননের সরঞ্জাম এবং উলের অর্ডার দেন এবং ইউটিউবের সাহায্যে সোয়েটার বুননের শিল্প শিখতে শুরু করেন। সজল জানায় , শখ এবং দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য সে সোয়েটার বুনতে শুরু করে এবং সে শুধু তার বোনের জন্য সোয়েটার বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু তার বুনন এতটাই ভালো হয় যে সেটা দেখে তার বন্ধুরাও তাকে নিজের জন্য সোয়েটার তৈরি করতে বলে। সজলের বোন তাকে বুনন শিখতে অনেক সাহায্য করেছিল। অবশ্য সজলের এই বিষয়টার প্রতি ভীষণ গুরুত্ব ছিল এবং আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এটা থেকে যে ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে সেটা হয়তো তিনি তখন কল্পনাও করতে পারেননি।

বন্ধুদের জন্য সোয়েটার তৈরি করার পর সে তার বন্ধুদের কাছে মজা করে সোয়েটারের মূল্য চেয়ে বসে, প্রথমে তার বন্ধুরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করলেও পরে তাকে জানাই যে “হাত দিয়ে তৈরি সোয়েটারের মূল্য অনেক বেশি এবং এতে অনেক পরিশ্রম লাগে সুতরাং এত কম দামে তুই জিনিসগুলো বিক্রি করিস না এর দাম অনেক বেশি।” বিষয়টা জানার পর ধীরে ধীরে সজল নিজের ট্যালেন্ট ইনস্টাগ্রামে তুলে ধরেন, অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তার লড়াই এবং ট্যালেন্ট, তার কাছে অনেক অর্ডার আসতে থাকে।

```

আগে যে কাজ তিনি একা করতেন এবং পার্ট টাইম হিসেবে করতেন সেটি পুরোপুরিভাবে ব্যবসাতে পরিণত করেন এবং সেখান থেকে আজকে তিনি কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে নিজের সংসারকে সচ্ছল অবস্থায় এনেছেন। তিনি জানাচ্ছেন যে তার বন্ধুরা তাকে এই বিষয়ে অনেক সাপোর্ট করেছে। এমনকি তিনি তার বাবাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন সোয়েটার তৈরি করার মত কাজ সাধারণত মেয়েরা করে থাকে আমাদের সমাজে তবে তার এই শখ সত্যি কি ভালো নাকি খারাপ, জবাবে তার বাবা বলেছিলেন কোন কাজই ছোট অথবা বড় হয় না, তার দাদু এক সময় ঝুড়ি বুনতেন এবং সেই ভাবেই তাদের সংসার চলত।

সব মিলিয়ে, তার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা।